বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সামগ্রিক সুরক্ষায় সরকারের সবধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে, সেইসাথে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জরুরি খাদ্য সহায়তার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন দূতাবাসে আরও তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার ( ২৩ এপ্রিল ) প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশি কর্মীদের ফেরত আনার বিষয়ে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ চাপ দিয়ে আসছিল। বিশেষ করে কুয়েত, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশ বেশি চাপ দিচ্ছিল। কুয়েত প্রথম থেকেই হুমকি দিয়ে আসছিল, অনিয়মিত কর্মী ফেরত না আনলে বাংলাদেশকে কালোতালিকাভুক্ত করবে। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণায়ের প্রতিনিধি নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই চাপ কিছুটা কমলেও ধাপে ধাপে কর্মী ফেরত আনা হবে বলে জানান তিনি।
ইমরান আহমদ বলেন, “করোনাভাইরাসের প্রভাবে এক লাখের বেশি কর্মী এরইমধ্যে ফেরত এসেছে। আরও কর্মী আনতে হবে। বিভিন্ন দেশ থেকে অনিয়মিত কর্মীদের ফেরত আনার বিষয়ে বলা হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। তেলের দাম একেবারেই কমে যাওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। নিয়োগদাতা দেশগুলোই তো এখন ভালো নেই। তবুও আমরা দেনদরবার চালিয়ে যাচ্ছি। হয়তো আর বেশি কর্মী ফেরত আনা লাগবে না।”
মহামারী করোনাভাইরাসের এই পরিস্থিতির মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত আসা কর্মীরা যাতে সহায়তা পান, সে বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সভাপতিত্বে ‘করোনা ভাইরাসে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য করণীয় বিষয়ে ৪র্থ জরুরি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায়’ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এসময় তিনি বিদেশে অবস্থানরত বিত্তবান ও সামর্থ্যবান বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের বিপদগ্রস্ত প্রবাসীদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহবান জানান। এছাড়া দেশে-বিদেশে করোনায় আক্রান্তদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন মন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, বিদেশ ফেরত প্রবাসী কর্মীদের জন্য কোয়ারেন্টিন ক্যাপাসিটি আরও বাড়াতে হবে। যেসব প্রবাসী কর্মী হেলথ সার্টিফিকেট নিয়ে দেশে আসছেন, তাদেরকেও নিয়মিত মনিটরিংয়ের আওতায় রাখতে হবে। মন্ত্রী বলেন, বিদেশ ফেরত প্রবাসী কর্মীরা যেন দেশে চলমান ত্রাণ সহায়তা পায় সে বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে একটি নির্দেশনা জারি করার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভায় মন্ত্রী বিদেশে ফেরত কর্মীদের জন্য সুষ্ঠুভাবে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানান। মন্ত্রী বিদেশ প্রত্যাগতদের জন্য প্রয়োজনীয় ফিল্ড হসপিটাল করার জন্য সেনাবাহিনীকে আহবান জানান। এছাড়াও তিনি বলেন, সেনাবাহিনী যদি দেশের চলমান খাদ্যশস্য ব্যবস্থাপনায় কৃষককে পরিবহন সুবিধা দেয়, তাহলে কৃষকও ফসলের ন্যায্যমূল্য পাবে এবং দেশেও খাদ্য সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।
ইমরান আহমদ বলেন, “আমরা একবারে বেশি কর্মী ফেরত আনতে চাই না। যেহেতু আমাদের কোরেন্টিনের বিষয় এখানে জড়িত। তাই ধাপে ধাপে কর্মীদেরকে আনতে হবে। যদিও আমরা কাউকেই আনতে চাই না। চাই কর্মীরা ওখানেই কাজ করুক। আমরা আশাবাদী, করোনার প্রভাব দ্রুত কেটে গেলে, বেশি কর্মী ফেরত আসবে না।”
সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত সভার যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল, সেগুলোর বাস্তবায়নের হার অত্যন্ত সন্তোষজনক। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং দফতরসমূহের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে এ সব কার্যক্রম সুচারুরূপে সম্পাদন করে আসছে।
সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে জেনারেল মাহফুজুর রহমান বলেন, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ২০ হাজার প্রবাস ফেরত কর্মীর কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। এসময় তিনি করোনা পরিস্থিতিতে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিভিল প্রশাসনকে সবসময় সহায়তার আশ্বাস প্রদান করেন।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো শহিদুজ্জামান, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্সাল মো. মফিদুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আকরাম হোসেন, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শামছুল আলম, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন এবং ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক মো হামিদুর রহমান প্রমুখ।